ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে বুয়েটে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ও বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সেই ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের পাশাপাশি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোও বুয়েট প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। তারা এর পক্ষে একটি মামলাও দায়ের করেছে।
তাদের যুক্তি ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার সময় ছাত্র নেতারাই নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ইউএনবিকে বলেন, বুয়েটে যে সংকট তৈরি হয়েছে, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের মধ্যে তার কোনো সমাধান নেই।
‘ছাত্র রাজনীতির নেতিবাচক দিকগুলোকে বিদায় করার দাবি উঠতে পারে, কিন্তু রাজনীতি নিষিদ্ধ করা শিক্ষার্থীদের জন্য কখনই ভালো ফল বয়ে আনবে না।’ যোগ করেন তিনি।
আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ইতিমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘কয়েকজনের অপকর্মের জন্য আপনি পুরো সংগঠনটিকে দোষ দিতে পারেন না। সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শিগগিরই বুয়েট প্রশাসনের সাথে কথা বলা হবে এবং আমরা তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানাবো।’
ছাত্রলীগের সাথে দা-কুমড়ো সম্পর্ক হলেও ছাত্রলীগের এ বক্তের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ছাত্রদল। সেই সাথে বিএনপির ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘ছাত্রলীগের অবৈধ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতির পরিবর্তে, প্রশাসনের (বুয়েট) উচিৎ ছিল ছাত্রলীগের স্বৈরাচারী রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।’
অন্যদিকে, বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, আবরারের মৃত্যুর জন্য বুয়েট প্রশাসন আংশিকভাবে দায়ী এবং ‘নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই’ বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে।
‘আমরা কখনই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা সমর্থন করি না। কারণ এটি বিরোধী কণ্ঠস্বর রোধ করতে ব্যবহার করা হতে পারে,’ বলেন তিনি।
বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে (২১) গত ৬ অক্টোবর রাতে শের-ই-বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ হয়ে রাজপথে আন্দোলন শুরু করে তার সহপাঠীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পরে তাদের দাবির মুখে গত ১১ অক্টোবর বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতিতে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।
ভিসি বলেন, ‘নিজস্ব ক্ষমতাবলে আমি ক্যাম্পাসে সব ধরনের সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি। ক্যাম্পাসে র্যাগিং বন্ধ করা হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।’
ঘোষণার পরদিনই ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মো. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত পাঁচ নোটিশে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ, আবাসিক হলের অবৈধ বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা ও ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যালয় সিলগালা করে দেয়ার ঘোষণা দেয় বুয়েট। সেই সাথে শিক্ষার্থীরা যাতে র্যাগিংয়ের অভিযোগ জানাতে পারে সে জন্য ওয়েবসাইট চালুর ঘোষণা দেয়া হয়।
একই দিন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামিউস সানী ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের হলের কক্ষ সিলগালা করে দেয় বুয়েট কর্তৃপক্ষ। বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অবৈধভাবে হলে অবস্থান করায় এসব কক্ষ সিলগালা করে দেয়া হয়। এছাড়া বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর হিসেবে ব্যবহার করা আহসান উল্লাহ হলের ১২১ নম্বর কক্ষও সিলগালা করে দেয়া হয়।